গিটার একটি বহুল পরিচিত এবং প্রচলিত বাদ্যযন্ত্র। এটি মূলত তারের উপর নির্ভরশীল একটি বাদ্যযন্ত্র। মূলত গিটার তিন প্রকার। যেমনঃ
১) স্প্যানিশ গিটার
২) হাওয়াইয়ান গিটার
৩) বেস গিটার
আবার অনেকের মতে গিটার প্রধাণত ২ প্রকার।
১) স্টীল স্ট্রীং গিটার
২) নাইলন স্টীং গিটার
আবার ফ্ল্যামেনকো গিটার নামের এক জাতের গিটার আছে । এ ছাড়া নানা নামের গিটার রয়েছে কিন্তু সাবমেনুর মত । যেমন স্টীল স্ট্রীং গিটার এর সাব মেনুর মত কিছু গিটার রয়েছে যেমন – রীদম, লিট, বেজ, হাওয়াইন গিটার। তো এই থেকে বোঝা যায় সাব মেনুর মত সাব গিটার রয়েছে নানা প্রকারের।
স্প্যানিশ গিটার একটি ওয়েস্টার্ন মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট এবং এটি খুবুই জনপ্রিয় । বাংলাদেশে অনেকে এই গিটার নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেও ৭০ দশকে গুরু আজম খান, ও ফকির আলমগীর বাংলা গানের জগতের নতুন ধারা সৃষ্টি করেন পপ ব্যান্ড ।এই থেকে শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশে স্প্যানিশ গিটার এর প্রভাব ।
এই স্প্যনিশ গিটারেও ভাগ রয়েছে ।
১) এ্যাকোস্টিক
২) ক্লাসিক্যাল
৩) ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক
এ্যাকোস্টিক গিটারঃ
এ্যাকোস্টিক গিটারের অংশগুলো হল বডি (Body), সাউন্ড হোল (Sound hole), ফ্রেট বোর্ড
(Fret Board), নেক (Neck), ব্রিজ (Bridge) ও হেডস্টক (Headstock)। এর তারগুলো ধাতুর তৈরি। এ্যাকোস্টিক গিটারের শব্দ তৈরি হয় সাউন্ড হোল এর মাধ্যমে। তারের কম্পন গিটারের বডির ভেতর প্রতিধ্বনিত হয় এবং সাউন্ড হোল এর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। কিছু এ্যাকোস্টিক গিটার রয়েছে যাদের বডির অভ্যন্তরে পিক-আপ থাকে, যা দ্বারা এমপ্লিফায়ার এর সহায়তায় এর ধ্বনিকে বর্ধিত করা যায়।
এটি দেখতে অনেকটা এ্যাকোস্টিক গিটার এর মতই, তবে তারগুলো মূলত নাইলনের তৈরি।
ইলেকট্রিক বা লীড গিটারঃ
লীড গিটারে কোনও সাউন্ড হোল থাকে না। এর সুর তৈরি হয় পিক-আপ (Pickup) এর মাধ্যমে। লীড গিটার বাজানোর জন্য এমপ্লিফায়ার (Amplifier) অত্যাবশ্যক। প্রসেসর
(Processor) এর মাধ্যমে এর সুরে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা যায়। ইলেকট্রিক গিটার তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের মূলনীতিতে এর তারের কম্পনকে বৈদ্যুতিক সংকেতে পরিণত করে। উৎপন্ন সংকেত খুবই দূর্বল থাকে লাউডস্পিকারকে চালানোর জন্য, এজন্য একে লাউডস্পিকারে পাঠানোর আগে বিবর্ধিত করে পাঠানো হয়। যেহেতু ইলেকট্রিক গিটারের উৎপন্ন সংকেত বৈদ্যুতিক, তাই বৈদ্যুতিক বর্তনী ব্যবহার করে শব্দে রঙ চড়ানো যায়। রিভার্ব ও ডিসটর্সন ইফেক্ট ব্যবহার করে সংকেতকে পরিমিত করা যায়।২০ শতকে ইলেকট্রিক গিটার ছাড়া অন্য কোন বাদ্যযন্ত্র সংগীতে এতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ১৯৩১ সালে জ্যাজ সঙ্গীতে ইলেকট্রিক গিটার একটি প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হয়। রক এ্যান্ড রোলের উন্নয়নে ও অগণিতসঙ্গীত ধারার উন্নতিতে ইলেকট্রিক গিটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আর্চটপ এ্যাকুস্টিক গিটার সর্বপ্রথম জ্যাজ সঙ্গীতে ব্যবহৃত হয় তড়িৎচুম্বকীয় ট্রান্সডিউসারের সাথে। ১৯৩২ সালে বাণিজ্যিকভাবে বৈদ্যুতিকভাবে বিবর্ধিত গিটার বাজারে পাওয়া যেতে থাকে। ১৯৩৬ সালে গিবসন প্রথম ইএস-১৫০ মডেলের ইলেকট্রিক গিটার বাজারে ছাড়ে। ইএস মানে ইলেকট্রিক স্প্যানিশ ও ১৫০ ডলার হলো দাম। ইলেকট্রিক গিটারের নানা রকম প্রকারভেদ আছে। ডাবল নেক গিটার গিটারিস্টকে একই সাথে গিটার ও বেজ গিটার বাজানোর সুযোগ দেয়। গিটারে তখন বারটি তার থাকে। জন ম্যাকলাফলিন প্রথমদিকে এটা ব্যবহার করে। পরে এটা জনপ্রিয়তা পায় জিমি পেজের মাধ্যমে যিনি গিবসন ইডিএস-১২৭৫ মডেলের গিটার ব্যবহার করেন স্টেয়ার ওয়ে টু হ্যাভেন গান গাওয়ার জন্য। ডন ফেল্ডারও তার হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া সফরে গিবসন ইডিএস-১২৭৫ মডেলের গিটার ব্যবহার করেন। জনপ্রিয়সঙ্গীত ও রক মিউজিকে ইলেকট্রিক গিটার দু’ভাবে ব্যবহা করা হয়। রিদম গিটার হিসেবে ও লিড গিটার হিসেবে যাতে মেলোডি লাইনগুলো ও গিটার সলোতে ব্যবহৃত হয়।
পপ ও রক সংগীতে এ্যাকুস্টিক গিটারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আছে ইলেকট্রিক গিটার স্টুডিও ও সরাসরি মঞ্চ পরিবেশনায়, বিশেষ করে হেভি মেটাল ও হার্ডরক ধারায়। কান্ট্রি, ওয়েস্টার্ন ও বিশেষ করে ব্লু গ্রাস মিউজিকে এ্যাকুস্টিক গিটার এখনো প্রথম পছন্দ শিল্পীদের এবং খুব বেশি ব্যবহৃত হয় ফোক মিউজিকে। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে ডিজিট্যাল ও সফটওয়ার ইফেক্টের মাধ্যমে অ্যানালগ ইফেক্ট-এর মতো আমেজ আনা যায়। অনেক ফ্রি গিটার ইফেক্ট আছে ইন্টারনেটে ডাউনলোড করার জন্য। যদিও ডিজিট্যাল ও সফটওয়ার ইফেক্টের অনেক সুবিধা আছে, তারপরও অনেক গিটারিস্ট এখনো অ্যানালগ ইফেক্টই ব্যবহার করেন। ১৯৬০-এর দশকে অনেক কিছু গিটারিস্ট চেস্টা করেন আরো বেশি রেঞ্জের ডেস্টোর্টিং ইফেক্ট ব্যবহার করতে। তারা ওভারড্রাইভ ব্যবহার করেন গেইন বাড়ানোর জন্য। এই এফেক্টকে ক্লিপিং বলেন শব্দ প্রকৌশলীরা। কারণ তারা অসিলোস্কোপে সংকেতের তরঙ্গচিত্র দেখে বোঝেন যে তরঙ্গের চূড়া কাঁটা যাচ্ছে ও প্রায় স্কয়ার ওয়েভের মতো দেখাচ্ছে। ২০০০ সহস্রাব্দে ৭টি তারের গিটার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্লেয়ার, ফিয়ার ফ্যাকটরি, কর্ন, লিংকিন পার্ক ইত্যাদি ব্যান্ড এ ধরনের গিটার ব্যবহার করতে থাকে। কর্ন ব্যান্ডের মাঙ্কি ৭টি তারের ইবসেন গিটার ব্যবহার করে ও গুজব ওঠে যে সে ৮ তারের গিটার বানানোর পরিকল্পনা করছে।
গিটার কিনতে নিঃসন্দেহে যেতে পারেন এলিফ্যান্ট রোডে, স্টেডিয়াম মার্কেটে অথবা বসুন্ধরা সিটিতে। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে Melody ও Music World নামে দুটি মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টের দোকান আছে যাদের কালেকশন তুলনামূলক ভালো। এখানে গিটারের দাম এলিফ্যান্ট রোডের থেকে খুব একটা বেশী হবে না। Melodyর আরেকটি শোরুম আছে এলিফ্যান্ট রোডে। তাই এই দোকানটি গিটার কেনার জন্য নির্ভরযোগ্য দোকান বলা যায়। এছাড়াও ফার্মগেটে বেশ কিছু ইন্সট্রুমেন্টের দোকান আছে, যেখানে গিটারগুলোর মান খুব একটা ভাল নয়। তাই সেখান থেকে গিটার না কেনাই ভালো।